সাধারণ লবণের পরিবর্তে‌ হিমালয়ান পিংক সল্টকে খাদ্যতালিকায় রাখুন! মিলবে একাধিক স্বাস্থ্য উপকারিতা
Blog

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা

লবণের একাধিক প্রকারভেদ থাকলেও সাধারণভাবে শব্দটির মানে হিসেবে সবাই খাবার লবণকেই বুঝে নেয়। বৈজ্ঞানিকভাবে সোডিয়াম ক্লোরাইড নামে পরিচিত, এই খনিজটি মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী এবং খাদ্যের মৌলিক স্বাদগুলির মধ্যে একটি।

বিভিন্ন রান্নায় অপরিহার্য সাদা রঙের এই খাদ্য উপাদানটি শুদ্ধতার নিরীক্ষায় হেরে যায় গোলাপি রঙের হিমালয় লবণের কাছে। পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণও বিভিন্ন রান্নায় স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এর বিশ্বব্যাপী প্রসারের পেছনে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর অসামান্য উপকারিতা দায়ী। এই হিমালয় লবণ কড়চাই নিয়ে এবারে ফিচার।

বিভিন্ন রন্ধনপ্রণালীতে অপরিহার্য, এই সাদা খাদ্য উপাদানটি গোলাপী হিমালয় লবণের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা হারায়। গোলাপী লবণ বা হিমালয় লবণ বিভিন্ন খাবারের স্বাদ যোগ করতেও ব্যবহৃত হয়। অধিকন্তু, এর অসামান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা এর বিশ্বব্যাপী বিস্তারের জন্য দায়ী। এই হিমালয় সল্ট কারচাইয়ের সাথে এইবার ফিচার করুন।

পিংক সল্ট: পৃথিবীর সবচেয়ে শুদ্ধ লবণ
হিমালয় লবণ পাকিস্তান অংশের পাঞ্জাব থেকে উত্তোলন করা শিলা লবণ। প্রায় ২০০ মিলিয়ন বছর আগে হিমালয়ের স্ফটিক লবণের সমুদ্রতল লাভায় নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তা সহস্রাব্দ ধরে চাপা পড়ে ছিল বরফের নিচে, যা এটিকে ক্রমাগত বাড়তে থাকা দূষণ থেকে রক্ষা করেছিল। এখন এটি একমাত্র অপরিশোধিত, প্রক্রিয়াবিহীন ও প্রাকৃতিকভাবে হাতে উত্তোলন করা হয় লবণ। আর এভাবেই এটি পরিণত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ লবণে।

সমুদ্রতলের বিশুদ্ধ অবস্থা হিমালয়ের লবণকে প্রক্রিয়াজাত টেবিল লবণের চেয়ে বেশি খনিজ সমৃদ্ধ করে তুলেছে। ফসফরাস, ব্রোমিন, বোরন ও জিঙ্কসহ এতে প্রায় ৮০ খনিজ উপাদান রয়েছে। এর স্ফটিক পাথরের হওয়ায় সূক্ষ্ম টেবিল লবণের চেয়েও বড় ও স্বল্প পরিমাণে সোডিয়াম সমৃদ্ধ।
স্থানীয়দের মতে, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী সর্বপ্রথম হিমালয় লবণের মজুত আবিষ্কার করে। ১২০০ দশকে পাঞ্জাব গোত্রের জানজুয়ার লোকেরা সর্বপ্রথম খনি থেকে লবণ উত্তোলন করে।
পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণের উপকারিতা

অম্লতা হ্রাস
হিমালয় লবণ একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার করে। এটি শুধু গ্যাস ও অ্যাসিডিটি দূর করে না, বদহজমও সারায়।
রক্তচাপ কমানো
হিমালয় লবণ প্রাকৃতিকভাবে আয়োডিনে সমৃদ্ধ, যা খাদ্য কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে টেবিল লবণে যোগ করে। হিমালয় লবণের প্রাকৃতিক আয়োডিন শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য তৈরি, অন্ত্রকে পুষ্টি শোষণ করতে ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে খুব কার্যকর।

হাড় গঠন
পিংক লবণ হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে কারণ এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো বেশ কিছু খনিজ রয়েছে যা হাড়ের গঠন ও ঘনত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

গলার সংক্রমণ
এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্যের কারণে, হিমালয় লবণ গলনালীতে যে কোনও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে। গরম পানিতে লবণটি দ্রবীভূত করে গার্গেল করলে ফোলাভাব সাড়তে পারে এবং যেকোনো জ্বালাপোড়া প্রশমিত হতে পারে।

ত্বককে নরম ও ময়শ্চারাইজ করে
গোলাপী লবণ দিয়ে গোসল করলে ত্বকের আর্দ্রতার মাত্রা বাড়তে পারে। এভাবে ত্বক নরম ও কোমনীয় হয়ে উঠবে। এতে কেবল মুখের ত্বকের মৃত কোষগুলোর বৃদ্ধি বন্ধ হবে না, ত্বক পূর্বাপেক্ষা আরও মসৃণতা পাবে।

বাংলাদেশে হিমালয় লবণ
চওড়া দাম থাকা সত্ত্বেও বিশ্ব জুড়ে হিমালয় লবণের মার্কেট ক্রম বর্ধমান। বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশে হিমালয় লবণের বাজার খুব একটা প্রসার না পেলেও এখানকার অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের মতই বাড়ছে এর দাম। খুচরা মূল্যে প্রতি কেজির দাম ২১০ থেকে ২৯০ টাকায় বর্তমানে সরাসরি ভোক্তারা এই লবণ কিনতে পারছেন। তবে অনলাইন বাজারগুলোতে আকর্ষণীয়ভাবে প্যাকেজিং করা লবণের দাম তোলা হচ্ছে আরও ওপরে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পিংক সল্ট-এর ১০০ গ্রামের দামই ৫ থেকে ৮ ডলারে বিক্রি হয় যা সাধারণ খাবার লবণের চেয়ে বিশ গুণ বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে হিমালয় লবণের মূল্য পড়ছে প্রতি কেজিতে ৫০ থেকে ৬৫ রুপি। স্বনামধন্য ই-কমার্স সাইট অ্যামাজন-এ হিমালয় লবণের মূল্য প্রতি ৪০০ গ্রামের জন্য পড়ছে ১৫০ রুপি।

পরিশেষে বলা যায়, পুষ্টিগুণ অনুযায়ী সর্ব সাকুল্যে পিংক সল্ট বা হিমালয় লবণ একটি সুষম খাদ্য উপাদান হতে পারে। মূল্যের পার্থক্যে সাধারণ খাবার লবণের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম সহজলভ্য হলেও পর্যটন শিল্প কেন্দ্রীক শহরগুলোতে অভিনব খাবারের রেসিপিতে এটি একটি অভিজাত সংযোজন।

Related posts

Leave a Comment

X
0